রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৩ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সৌদি আরবে জিয়া পরিবারের সম্পদ নিয়ে দেওয়া বক্তব্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উকিল নোটিস পাঠিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বুধবার বেলা ১১টার দিকে নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, সম্প্রতি জিয়া পরিবার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যেসব অভিযোগ উত্থাপন করেছেন এসব অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছিলাম। কিন্তু দু:খজনকভাবে তারা মুখে নানা কথা বললেও অভিযোগ প্রমাণে কোনো তথ্য উপস্থাপন করতে পারেননি। তাই আমরা আমাদের অঙ্গীকার অনুযায়ী খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছি।
সুপ্রীম কোর্ট বারের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন গত মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন বলেও জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপর কম্বোডিয়া সফর শেষে ফিরে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক এই প্রসঙ্গটি তুললে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে কথা বলেন।
এ সংক্রান্ত খবর দেশের আরও অনেক সংবাদ মাধ্যমে না আসায় তিনি গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। মালিক-সম্পাদক, সাংবাদিকরা কোনও সুবিধার বিনিময়ে এধরনের খবর প্রকাশ করা থেকে বিরত থেকেছেন কি-না সে প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উকিল নোটিশে বলা হয়েছে, ওই বক্তব্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নি:শর্ত ক্ষমা চাইতে হবে এবং তা সংবাদ মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। ৩০ দিনের মধ্যে তা করা না হলেও ক্ষতিপূরণের মামলা করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা না চাইলে আইনানুগ ব্যবস্থা: মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জিয়া পরিবারের সম্পত্তি সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। সুতরাং প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা না চাইলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বৃহস্পতিবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যের একদিন পর আজ শুক্রবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
অথচ বৃহস্পতিবার রাতে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি একটি অনলাইনকে বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী অনেক বক্তব্য দেন, যার বেশিরভাগ আমরা খুব একটা গুরুত্ব দেই না। কারণ, তিনি অনেক সময় বক্তব্য দেন, যার রাজনৈতিক মূল্য আছে বলে আমার কাছে মনে হয় না।
এর আগেও মির্জা ফখরুল এমন ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ছিলেন। ১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়া আইএসআই’র কাছ থেকে টাকা নিয়ে নির্বাচন করেছেন। গত ২৩ মার্চ, আওয়ামী লীগের এমন অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একই ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের এ বক্তব্য মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রীকে জনগণের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চাইতে হবে, নইলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পরে দিন ২৪ মার্চ ভাসানী মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল আয়োজিত মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এধনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যের প্রেক্ষিতেই নিজের অবস্থান ব্যক্ত করেন। গণভবনে সিনিয়র সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়া আমাকে কিসের জন্য ক্ষমা করেছেন? ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরও আমি বেঁচে গিয়েছি, তিনি কি এ কথা বলছেন? তিনি ক্ষমা করেছেন নাকি চাচ্ছেন, তা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। তার কাছে কেন ক্ষমা চাইবো? আমি এমন কী অপরাধ করেছি? বরং তার উচিত দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়া।
প্রসঙ্গত, গত ৯ নভেম্বর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে চতুর্থ দিনের বক্তব্য দিতে গিয়ে আদালতকে খালেদা জিয়া বলেন, শেখ হাসিনার প্রতি প্রতিহিংসামূলক আচরণ করবেন না তিনি। প্রতিহিংসার রাজনীতিও করবেন না। শেখ হাসিনাকে তিনি ক্ষমা করে দিয়েছেন।